শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৯

    অব্যক্ত ভালবাসা        
       
                               
         



                                                                               একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধা মহিলাকে যতটা ঘৃণা করতাম হয়তো গ্রামে আর কাউকে এতোটা ঘৃণা করিনি।

কাচারি ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ালে একটা অর্ধ নিস্তেজ বাড়ি চোখের সামনে ভেসে উঠে।আরও স্পষ্ট হয় যখন ঘর থেকে গুটিকয়েক পা এগিয়ে পুকুর পাড়ে রেইনট্রি গাছের ভাসমান মূলের উপর বসে ধানক্ষেতে নির্মল বাতাসে কানায় কানায় পূর্ণ বোতল এক নিমেষে খালি করতে বসি। তাকিয়ে থাকি বাড়িটার দিকে,পিচ্চিকাল থেকে দেখে আসা সে বাড়ি।দুই বুড়া-বুড়ি বাহারি নাম নিয়ে এখনো দিব্যি কষ্টের জীবন পার করে যাচ্ছে।তারা স্বামী স্ত্রী নয়, রেষারেষি করে ঠিকে থাকা দুই ভাই বোন।

বড় বোনের প্রচলিত নাম হুইল্ল্যার মা,ছয় মেয়ে এক ছেলের মা'য়ের বড় মেয়েটি হালকা কিছু নিয়েই মুখ গুমরা করে ফুলেফেঁপে থাকত। এর পর থেকেই অন্যের বাড়িতে কাজ করা মহিলাটি তার বিখ্যাত পদবি নিয়ে এখনো বেঁচে আছে।বিখ্যাত না বলে একে ঠোঁখ্যাত বললেও খারাপ শুনায় না।পাড়ায় প্রত্যেক ছেলে বুড়োর ঠোঁটের আগায় এ নাম শোভা পেত।পিচ্চিকালে পুকুরে গোসল করার সময় আমরা সবাই একটা কমন মজা নিতাম, মাথা,পিঠ, পা পানির নিচে দিয়ে নগ্ন পাছা পানির উপরে পালাক্রমে ভাসিয়ে  সুঁই দিয়ে কাঁথা সেলাই করার মতো সামনে  এগিয়ে যেতাম,আর মুখে মুখে বলতাম,"হুইল্ল্যার মার কাঁথা সেলাই।"এমন না যে এলাকায় শুধু হুইল্ল্যার মা'ই কাঁথা সেলাই করত,তবুও কেমনে যে হুইল্ল্যার মা'র কাঁথা সেলাই করার প্রচলন হল জানি না, এগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে বড় ভাইবোনদের কাছ থেকে পাওয়া।

ছোট ভাই দুইক্ষ্যা দাদার ভাল নাম দুখু মিয়া।জন্ম দিয়ে মা মারা যায় বলে সবাই তাকে দুইক্ষ্যা বলে ডাকে।বড়দের থেকে ছোটদের সাথেই তার অগাধ মিল, হয়তো ৪ ফিট উচ্চতার দুখু মিয়া ছোটদের সাথে মিশে নিজেকে উঁচু ভেবে আত্মতৃপ্তি পায়।ক্লাস থ্রি ফোরে পড়ার সময় অতীতের গল্প, যুদ্ধের গল্প শোনার জন্য হয়তো একটা পাখির বাচ্চা পাওয়ার আশায়, হয়তোবা পাখির খাঁচা পাওয়ার আসায় সারাদিন ঘুরঘুর  করতাম ছোট্ট দুইটা টিনের চালাঘরের সেই নিস্তব্ধ জঙ্গলাকীর্ণ  বাড়িতে।

দুখু মিয়ার সাথে আমার বয়সী প্রায় সকলেরই গভীর মিল ছিল।আমরা কয়েকজন প্রায়ই বাড়ির উঠোনে পিঁড়ি নিয়ে বসতাম,গল্প শুনতাম,গাছের কোটরে এখন কয়টা পাখির বাচ্চা আছে, এ বছর টিক্কা ময়না পাখিটি কাকে দিবে এসব নিয়ে হরেকরকম আলোচনা চলত। দাদা আগের মতোই অন্যের দেওয়া বাঁশ দিয়ে বেতের বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে যেত বিনিময়ে আরেকটা এক্সট্রা বাঁশ নিত যা দিয়ে  বড় বড় খাঁচা বানিয়ে বিক্রি করাই ছিল তার আয়ের একমাত্র উৎস।গল্প করলে কাজের ব্যাঘাত ঘটে এমন ধারনা করে রান্নাঘর থেকেই বৃদ্ধা মহিলাটি দাদাকে গালিগালাজ করত,আমাদের দিকে এমনভাবে তাকাত যেন চোখের উত্তাপে ভস্ম করে দিবে।পেয়ারা গাছে, জাম্বুরা গাছে অনেক ফল হলেও মহিলার সামনে কিছুই নেওয়া যেত না,যদিও দাদা নেওয়ার জন্য ভয়ে ভয়ে বলত।তবে আমরা যখনই সুযোগ পেয়েছি,হয়তো মহিলাটি আমাদের পুকুরে গোসল দিতে গিয়েছে  বা আমাদের বাড়ি থেকে ছোট কলসি দিয়ে পানি আনতে গিয়েছে,যে যা পেরেছি নিয়ে সোজা ধান ক্ষেতের চিপায়।ধানক্ষেত থেকেই অদৃশ্য চোরদের উদ্দেশ্যে গালিগালাজ শুনতে পাওয়া যেত।

একদিন তো ধরাই খেয়ে গেলাম,শূন্য বাড়ি দেখে পেয়ারা গাছে উঠেছি, সঙ্গীরা নিচ থেকে কুঁড়িয়ে জমা করছে,হঠাৎ করে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পাছায় দুইটা বাড়ি, নিচে তাকিয়ে দেখি সবাই ধানক্ষেতের চিপা বরাবর দৌড়, আমিও সবার মতো দৌড় দিলাম কিন্তু ধানক্ষেতে না গিয়ে গাছতলায় এক পা মচকে পড়ে রইলাম।হয়তো দৌড় না দিলে এলোপাতাড়ি আরো কয়েকটি কঞ্চির বাড়ি পিঠ বরাবর এসে পড়ত।গালিগালাজ করতে করতে বাড়িতে এসে সোজা বাবার কাছে বিচার!যা হওয়ার তাই হয়েছে,ভয়ে সারাদিন বাড়ির আশেপাশে যায়নি।সন্ধ্যায় ভাল পড়ুয়া ছাত্রের মতো বই নিয়ে পড়তে বসেছি।খাওয়াদাওয়া করে বিছানায় শুয়ে আছি,আশ্চর্য হলাম যে বাবা কিছুই বলছে না।শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি,বাবা কানে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, পুকুর পাড়ে কবরস্থানের পাশে আন্ধকারে আমাকে বসিয়ে রাখতে।যাওয়ার সময় বাড়ি টার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে গেল,

--এখানে বসে বসে ভাব,ওরা একা বাড়িতে কত কষ্ট করে টিকে আছে।

একথা বলেই বাবা বিদায়!ভাবব কি কবরস্থানের পাশে আছি ভয়েই তো দম শেষ। বাবা যাওয়ার পরপরই মা ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ স্বরুপ  কিছুই ভাবতে না দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসল।

এর পর থেকেই এই মহিলার প্রতি মনের কোণায় হালকা ঘৃণা বাসা বেধেছিল। তবে ঘৃণাটা চূড়ান্ত পর্যায়ে রূপ নিল যখন মুখে মুখে শুনলাম বৃদ্ধা মহিলাটি সুদে টাকা দেয়।একপা গর্তে চলে গেছে আর সে কিনা সুদ খায়,কথাটা মনে হতেই মেজাজটা বিগড়ে যেত।

 স্কুল লাইফ শেষে শহরে কলেজে ভর্তি হলাম। ছুটিতে গ্রামে গেলে মাঝেমাঝেই বুড়িকে দেখা যেত।কাচারি ঘরে বসে আছি,হয়তো মাটির কলস নিয়ে পানি নিতে আসছে,হয়তো মোবাইল নাম্বার নিয়ে আসছে একমাত্র ছেলের সাথে একটু কথা বলার জন্য। ছেলে দুইটা বিয়ে করে মাকে একা ফেলে রেখে ঢাকায় মেকানিক্সের কাজ করে।আমার কাছেও আসে মাঝেমধ্যে, মোবাইল নাম্বার টা হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে বলে,

--ভাই রে,তোর মোবাইলডা দে একটা মিসকল দেত।মেলা দিন ধইরা ছ্যাড়াডার সাথে আলাপ হয়না।

:মোবাইলে টাকা নাই।অন্যকারো কাছে যান।

সরাসরি না করে দিলাম  টাকা থাকা সত্ত্বেও।উনার মুখের ভঙ্গি দেখে বুঝে ছিলাম বুকে কতটা কষ্ট নিয়ে ফিরে গিয়েছিল। মহিলাটাকে দেখলেই সুদখোরের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে,তখন উনাকে অসহ্য,বিরক্ত লাগে।দিন যায়, মাস যায় বাড়িতে আসলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও  বিতৃষ্ণা নিয়ে বুড়িকে দেখতে হত।

মেডিকেলে এডমিশনের পড়ার চাপে অনেকদিন বুড়ির কথা মনেও হয় না, দেখাও হয় না।টার্ম শেষে একদিন বাড়িতে কাচারি ঘরে শুয়ে আছি।পুকুর ঘাট থেকে কে যেন ডাকছে,বের হয়ে দেখি বুড়িটি গোসল শেষ করে ঘাট থেকে উপরে উঠতে পারছে না,

--বাবা,একটু হাত ডা ধরবি,উঠতে পারছি না।

আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজে পেলাম না।বুড়িকে দেখে বড্ড মায়া হচ্ছে,থরথর করে শীতে কাঁপছে, ভাঙ্গা পুকুর ঘাট দিয়ে উঠতে পারছে না।

:আমার হাত ধরেন।উঠতে পারেন না,এ ঘাট দিয়ে নামেন কেন?

--ভাই রে,ছুডু সময় থেইক্যা তোরার এই  দীঘিতে গোসল কইরা অভ্যাস ।অন্য কোন হানে মন সয় না।

আমি কিছুই বললাম না,সোজা কাচারি ঘরে এসে শুয়ে পড়লাম।যে ভাবনা টা বাবা ৮/৯ বছর আগে ভাবতে বলেছিল,সেই ভাবনাটাই এখন বারে বারে মাথায় চক্কর দিয়ে যাচ্ছে।

বুড়ির স্বামীকে নিজের চোখের সামনে মরে যেতে দেখেছি।মেয়েরা সবাই নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। একটা মাত্র ছেলেও মা মরল কি বাঁচল তার পরোয়া না করে ঢাকায় পড়ে আছে।একদিন আলো ভর্তা ডাল  রান্নাকরলে অনায়েসে ২ দিন পার করে দিতে পারে। ধানের মৌসুমে ক্ষেতে পরে থাকা ,ইঁদুরের গর্ত থেকে বের করে আনা ,আশেপাশের গেরস্তের কাছে পাওয়া কিছু ধান দিয়েই কোনভাবে মাস চলে যায়।৮০ বছরে এসেও কেউ রান্না করে খায় ভাবতেই অবাক লাগে।এর কাছে ওর কাছে পাওয়া অল্প জমানো টাকাকে বাড়ানোর জন্য হয়তো নিরুপায় হয়ে এই খারাপ পন্থা নিয়েছে।আর আমি সমস্ত মানুষটাকে খারাপ ভেবে ঘৃণা করে আসছি!

-- ভাই রে, দিবি একটু নাম্বার ডা ঢুকাইয়া।

হয়তো হাত ধরে পুকুর থেকে তুললাম বলেই মনের সাহসেই নাম্বার নিয়ে ডিরেক্ট রুমে ঢুকে গেল।এখন সত্যিই টাকা নেই,ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স এনে কল দিয়ে মোবাইল হাতে ধরিয়ে দিলাম। যে কাজ টা বহুবছর ধরে করে আসছি,মোবাইলে টাকা নেই বলে ফিরিয়ে দিয়ে ,তার পুনরাবৃত্তি করে উনার মনের পাথর আর ভারি করতে চাই না।

--তুই তো আমরার বাড়িত যাস না,ছুডুবেলার কথায় অভিমান করতে নেই,গরীব মানুস কি থেইক্কা কি কইয়া ফেলছি।

:আরে কি যে বলেন,অভিমান করব কেন!
পড়ার চাপে যাওয়ার সুযোগ হয় না।

"তুই তো আমরার বাড়িত যাস না" কথাটি বারবার মনকে নাড়া দিচ্ছিল।ওইদিন বিকালে দুইবার যেয়েও ফিরে এসেছি।কি একটা সংকোচবোধ পিছনে টানছিল।তৃতীয় বার ঠিকই ক্লাস ফোরে পড়ুয়া ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে আস্তে আস্তে এ বাড়ির দিকে হাঁটা ধরছি।অজানা এক আকর্ষণ আমাকে এখানে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, জানতে চেষ্টাও করিনি কি সে আকর্ষণ, হয়ত জানতে পারলে পেছপা হয়ে ফিরে আসতে হত।

--ব রে ভাই,ব।কতদিন পর এই বাড়িতে আইছস।
একথা বলেই দুইটা পিঁড়ি আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিল।

:না,দাদু।বসব না।খাওয়াদাওয়া করছ?

--দুইক্ষ্যার লাইজ্ঞা দুইলা হানিভাত রাখছিলাম,চেপা(হিদল) ভর্তা আছে,হে খাইত না, তুই খাইবি?

:মাত্র খেয়ে আসছি।কাঁচা সুপারি থাকলে একটু দেও,পান লাগবে না।
দুপুরে পানি ভাত কেন?রান্না কর নি?

--ভাই রে রানতে ইচ্ছা করে না,কাল সহালে রানছিলাম,এগুলোই খাইতাছি।

:দুইক্ষ্যা দাদা কই?

--হের কথা আর কইস না।সারাদিন ঘ্যানরঘ্যানর করতেই থাকে। এইটুকু একটা ব্যাডা,হে এইডা খাইতো না ওইটা খাইতো না,আমারে একবারে জ্বালাইয়া মারছে।কারো বাড়িতে গিয়েও খাইত না।

কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলতেছে,মনে হয় হের লগে জ্বীন ভূত আছে।রাইত বিরাতে বিড়বিড় করে।
দেখ ওই ঘরের চিপায় পড়ে আছে।

ভাঙ্গা টিনের চালা ঘরের ভিতরে চোখে পড়ে, চৌকির উপর পুরাতন কাঁথা বেছানো,তার পাশেই দাদা শুয়ে আছে,পাটের রশ্মি দিয়ে বানানো দুইটা চিকে তাতে মশলার বোতল রাখা,বাঁশ দিয়ে বানানো হাড়ি পাতিল রাখার তাকিয়া,ছোট একটা কলসিতে অল্প জল।অন্যান্য বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন একা একটা বাড়ি।একটা কলাগাছের বাকল ঘর থেকে বাহিরে সংযোগ দেওয়া,রাতে বাহিরে যেতে ভয় পায় বলে প্রস্রাব করার এই নিঞ্জা টেকনিক।

বুড়ি টাকার হিসাব দিয়ে যাচ্ছে,কার কাছে কত টাকা দিয়ে রাখছে তার হিসাব।যেন একবারে মরার আগে আপন কাউকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
বুড়ি আমাকে অনর্গল তার কষ্টের কাহিনি শুনিয়ে যাচ্ছে।কোন মেয়ে কোন স্বামীর ঘরে কত কষ্টে আছে,ছেলেটা ঈদ আসলেও দেখতে আসে না।কতদিন ধরে ছোট মেয়ের সাথে কথা হয় না!

:নাম্বার দেন,কল দিয়ে দেই।

--না ভাই থাক,হুদাই ট্যাহা নষ্ট অইব।

:মোবাইলে টাকা আছে,আপনি যতক্ষণ খুশি কথা বলেন।

বুড়ি হয়তো কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছিল না,যেই আমি মোবাইলে টাকা থাকলেও না করতাম,আর সেই আমি-ই কিনা বুড়ির বাড়িতে গিয়ে নিজে সেধে কল দিতে চাচ্ছি।বুড়ি হয়তো আমার হঠাৎ ভালবাসা হজম করতে পারে নি।আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইছে,আমি কি বলছি তা আরও ভাল করে বুঝার চেষ্টা করছে,বুড়ির চোখের কোণার সিক্ততা আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারে নি।

:আপনার যখন মোবাইল করতে মন চাইবে,আমাকে ডাক দিয়েন,আমি মোবাইল নিয়ে আসব,যতক্ষণ খুশি কথা বলবেন।

বুড়ি চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিল কিনা আমি জানি না,কারো চোখে পানি দেখলে আমার অসহ্য লাগে,অসহ্য চোখের পানি না দেখেই সেদিন বাড়ি চলে আসলাম।

আগামীকাল থেকে মেডিকেলে ক্লাস শুরু হবে।ব্যাগ গুছিয়ে আজই হোস্টেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিব।এক পা প্যান্টে চালান করলাম মাত্র,পাশের ঘরের ভাবি হাসতে হাসতে বলতে লাগল হুইল্ল্যার মা নাকি আমাকে অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে,২/৩ জনের কাছে খবর ও নাকি পাঠাইছে।বুড়ির কাছে যেতে কেমন অস্পৃশ্য লজ্জা পাচ্ছিলাম তার উপর যাওয়ার সময় আরেক ভাবি হেসেহেসে বলে দিল,

---কি ব্যাপার,বুড়ি রাও আপনাকে খুঁজে।যান যান তাড়াতাড়ি যান।

মোবাইল করতে মন চাইলেই ডাক দিতে বলছি বলে কি এই অসময়ে ডাক দিবে।অনেকটা বিরক্তি নিয়েই মোবাইল সাথে নিয়ে গেলাম,ভাবলাম ছেলের সাথে মোবাইলে কথা বলবে।
রাগের স্বরেই বললাম,

:কি হয়ছে,ডাকতেছেন কেন?কার কাছে কল দিবেন,তাড়াতাড়ি নাম্বার দেন,কল দিয়ে দিচ্ছি।

--দুইক্ষ্যারে দিয়ে তোর জন্য বাজার থেইক্কা  কাঁঠল আনাইছিলাম।আমি ভাইঙ্গা দেই,দুইখান কোষ আমার সামনে বইসা খা।

:না,দাদু।এখন কাঁঠাল খাব না।

--আমরা গরীব বলে খাইবি না,ঘিন্না লাগে নাকি।নে,ভাই তুই নিজের হাতে ভাইঙ্গা খা।

আমার অপছন্দের তালিকায় প্রথমে আছে কাঁঠাল। একথা বুড়িকে কেমনে বুঝাই। তবুও বুড়ির এমন কথায় নিজের অনিচ্ছা কে জলাঞ্জলি দিয়ে বুড়ির হাত থেকে কাঁঠাল নিলাম।বুড়ি থাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।সে যে কি শান্তি পাচ্ছে সেটা বুঝার ক্ষমতা আল্লাহপাক আমায় দেয়নি। যে মানুষটাকে আমি এতোদিন যাবত ঘৃণা করে আসছি, সেই মানুষটাই নিজে না খেয়ে আমাকে কাঁঠাল খাওয়ানোতে আনন্দ পাচ্ছে।সিক্ত চোখ নিয়ে পালিয়ে আসা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথের অস্তিত্বের কথা আমার জানা নেই।শুধু সেটাই জানি বুড়ির অব্যক্ত ভালবাসার কাছে আমি পরাজিত।

Abdullah Nayon

কোন মন্তব্য নেই: