বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯

     ফিজিওলজি ভাইভা 





                                                                          মেডিকেলে প্রফ দিতে হলে নাকি দেহে বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। সবার মতো আমিও ঘটা করেই কিছুটা ধার দেওনা করে ফরমাল শার্ট,  কালো প্যান্ট,কালো জুতা,পরিষ্কার এপ্রোনের আয়োজন করেছি।তবে আমার আয়োজনটা একটু বেশিই ছিল,রিটেনের একমাস আগে হুট করে মাথা ন্যাড়া করে দিলাম।হিসাবমত ভাইভার আগেই মুটামুটি ভালই চুলের অধিকারীর হওয়ার আশাবাদী। কিন্তু আমি অংকে কাঁচা হওয়ায় কাল্পনিক হিসাবের সাথে বাস্তবিক হিসাবের কোন মিলই পেলাম না।রিটেন শেষে প্রথম ভাইভা দিয়ে ক্যাপ সহিত ঈদ করে পরবর্তী ভাইভা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হোস্টেলে এসে মাথায় হাত দিয়েও চুলের তেমন কোন পরিবর্তন দেখলাম না।

এক্সটার্নালঃ তুমি কি মালয়েশিয়ান?

ভাবতেছি হ্যা বলে দিব, দূরদেশী হওয়ার সুবাধে যদি একটু করুণা পাই।কিন্তু পরপরই মনে হল, মালয়েশিয়ানরা  কোন ভাষায় কথা বলে  নামই জানি না,কথা বলবো তো দূরের কথা।
:না ম্যাডাম,বাংলাদেশী।

--বাসা কোথায়?

:ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।

ইনটার্নালঃ কাছেই তো।


ফিজিওলজি ভাইভা চলছে।এক্সটার্নাল ম্যাডাম কার্ড দেখে অনর্গল  প্রশ্ন করে যাচ্ছে,আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছি ম্যাডামের সুন্দর মুখখানার দিকে।ভাবছি,এতো সুন্দর মুখ দিয়ে কেমনে এতো  কঠোর ধমক দিচ্ছে।প্রতিটি প্রশ্নই ধমকের সুরে!আমার আগের দুইজনের সময় এক্সটার্নাল ম্যাডাম ফোনে কথা বলছিল,মনে মনে খুব চাইছিলাম আমার ক্ষেত্রেও এমনটা হওক। হ্যাঁ এমনটাই হয়ছে তবে একটু ভিন্নভাবে,
আমাদের কলেজের ম্যাডাম এদিকে দৃষ্টিপাত না করে অনবরত  কথা বলে যাচ্ছেন একজন জুনিয়র ম্যামের সাথে!

--ADH হরমোনের কাজ বল।

:water reabsorbtion করে।

--তোমার মাথা থেকে করে!

:না,ম্যাডাম। রেনাল টিউব্যুল থেকে।

--স্পেসিফিক পার্টের নাম বল না কেন!

:ম্যাডাম, PCT থেকে।

--PCT তে তো ADH ই ক্ষরিত হয় না।কি বলছ এসব!

:সরি, ম্যাডাম। DCT থেকে করে।

ফাইজলামি কর!একটা না হলে তো আরেকটা হবেই।
--টেস্টোস্টেরনের সোর্স বল।

প্রশ্নটা চেনাচেনা লাগছে তাই একটু জোরেশোরেই ধমকের সুরে বলে ফেললাম ,
:ম্যাডাম,টেস্টিস।
প্রতিক্রিয়া আসবে তবে এতো জোরেশোরে আসবে ভাবি নি,

--টেস্টিস তো এতো বড়, সবটা থেকেই আসে নাকি!টেনে টেনে উত্তর বের করে নেওয়া লাগে কেন?স্পেসিফিক সেলের নাম বল।

:সেলের নাম শুনেই হুট করে বলে দিলাম স্পার্ম সেল।

:কি বললা!!তাহলে লিডিগ সেল থেকে কি আসে?

আন্দাজ করতে পারছি আগের উত্তর টা ভুল ছিল,
:সরি ম্যাডাম,লিডিগ সেল থেকেই টেস্টোস্টেরন আসে।

এবার ম্যাডাম একটু বেশি-ই রেগে গেলেন।
--কি!লিডিগ সেল থেকে টেস্টোস্টেরন আসে!উল্টাপাল্টা যা মুখে আসছে বলে দিচ্ছ।
ম্যাডাম,আপনার ছাত্র এসব কি বলে,লিডিগ সেল থেকে নাকি টেস্টোস্টেরন আসে।

রীতিমতো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।আরেকটা মাত্র সেল বাকি আছে,সার্টোলি সেলের কথা বলে দিয়ে ম্যাডামের হাইপার-রাগন্ত মুখটা দেখার আনন্দ বিঘ্নিত হল ইন্টার্নালের কথা শুনে,

>বাসে জার্নি করে এসে সব গুলিয়ে ফেলেছে।কাছাকাছি বাড়ি তো, বাড়ি থেকে আসে। কথাটা বলেই ম্যাম একটা মুশকি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকাল।

:জ্বি ম্যাডাম।প্রতিদিন বাড়ি থেকে আসি।এতো সকালে রাস্তায় অটোরিকশা ছিল না।অনেকটা পথ হেঁটে এসে বাসে উঠতে হল।

--কতক্ষন লাগে?

:দেড় ঘন্টা।  ঈদের জন্য ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে আসতে হয়ছে।

--বাড়ি থেকে আসো কেন?হোস্টেলে থাকবা,বাড়ি থেকে এতো কষ্ট করে এসে পড়া হয় না।

:জ্বী ম্যাডাম,কাল থেকেই হোস্টেলে উঠব।

--গতবছর কোনটাতে খারাপ করছিলা?তুমি দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিচ্ছো না?

:জ্বি না,ম্যাডাম।আমি জীবনে এই প্রথম প্রফ দিচ্ছি।
 চার আঙ্গুলের কপালে দুইটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছা করতেছে, এই প্রশ্নটা আগে জিজ্ঞাস করলে হয়তো কষ্টি ধমক গুলো খেতে হত না।

মনটাই খারাপ হয়ে গেল,এতো বাজে ভাইভা দিলাম।আল্লায় জানে এটা ভবিষ্যতে  দ্বিতীয়বার দেখা করার অশনি সংকেত কিনা!তার চেয়ে বেশি অপরাধবোধ হচ্ছিল ম্যাডামকে মিথ্যা বলে আসলাম! মেডিকেল এডমিশনের কোচিং করার সময়  ভাইরা বলত,
"ভাইভাতে স্যার যদি বলে আজকে সূর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে,তাহলে তুমি বলবা জ্বি স্যার আমিও দেখেছি। কখনো তর্ক করতে যেও না।" সেটার বহিঃপ্রকাশ এমন করে হবে ভাবিনি।

মনে মনে অনেক যুক্তি দাঁড় করালাম,আমি তো মিথ্যা কিছুই বলি নি।সকালে রেডি হয়ে হোস্টেল থেকে হেঁটে বাঘমারা মোড়ে গেলাম ডিম পরোটা খাওয়ার উদ্দেশ্যে,আগের দিন ম্যাডাম বার বার বলে দিসিল,একটা ডিম দুইটা পরোটা না খেয়ে কেউ ভাইভা তে এসো না।পরে অটোরিকশা নিয়ে গেলাম কলেজ ক্যাম্পাসে।যাওয়ার সময় অটোরিকশা থেকে দেখলাম বাস ভর্তি লোক দাঁড়িয়ে আছে চলন্ত বাসে।কয়েকদিন আগেই তো ঈদের ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে আসলাম।আংশিক পাপ মুক্তির আনন্দ শিরায় শিরায় আন্দোলিত হচ্ছে।

আবদুল্লাহ নয়ন

কোন মন্তব্য নেই: